‘ওরা কেন অজানা থাকবে?’
মারুফ, ফয়েজ, জসিম, নাফিজ, শামীমা
ডিইউএমসিজেনিউজ.কম
প্রকাশিত : ০১:২৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০১:৫৪ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৮ বুধবার

‘ওরা কেন অজানা থাকবে?’
অগ্রহায়ণের রোদেলা দুপুর। নজরুল সমাধিসৌধের বামপাশ ঘেঁষে হাঁটছিলাম আমরা। হঠাৎ সামনে থাকা পলাশ গাছের নিচে কংক্রিট সোফাসদৃশ আসনের স্থানটিতে বসে পড়তে ইচ্ছা হলো খুব। বসবার মতো স্থানই বটে! সামনে গিয়ে ধুলো সরাবার জন্য ফুঁ দিতেই বেরিয়ে এলো নামফলক। নামগুলো দেশের ইতিহাসের অন্যতম সাহসীদের। যারা মৃত্যুর শমন জারি হয়েছে দেখেও পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করেননি। বরং ঘাতকের বুলেটের সামনে দ্বিধাহীনভাবে বুক পেতে দিয়েছিলেন।
বলা হচ্ছিল জাতীয় কবির সমাধির পাশে চির শয়ানে শায়িত জাতির অনেক সূর্যসন্তানদের কথা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো এই মানুষদের ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে। এই গণকবরের অনেকটা জুড়ে শায়িত আছেন রোকেয়া হল কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এখানে একসাথে ঠাঁই হয়েছে সোবহান, রাশিদা বেগম, মোঃ আলী, তোফায়েল আহম্মেদ, ছামিরুন নেছা, শংকর রায়, বিরু রায় সহ নাম না জানা অনেকে।
গণকবরগুলোতে আরও আলাদা স্থান পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিখ্যাত অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, পরিসংখ্যান বিভাগের আবু নাসের মো মুনীরুজ্জামান, ইংরেজি বিভাগের এস এম এ রাশীদুল হাসান, ইতিহাস বিভাগের ছাত্রনন্দিত শিক্ষক মো আবুল খায়েরসহ অনেকে। যারা সকলেই একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর নির্মমতার শিকার হন।
আবার এই গণকবরের লাগোয়া স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন উপাচার্য। তাদের একজন হলেন- অধ্যাপক ড. মুজাফফর আহমেদ যিনি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এবং পদাধিকার বলে ডাকসুর প্রথম সভাপতি ছিলেন। আরেকজন হলেন ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ নোবেল পুরস্কার কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অন্যদিকে নজরুল সমাধির ঠিক ডান কোণে শায়িত আছেন ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকে আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়া শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। দেশের প্রথম চিত্রকলা শিক্ষার বিদ্যাপীঠ আর্ট কলেজ (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠায় মূল অগ্রণী ভূমিকা তিনিই রেখেছিলেন। তাঁর পাশে রয়েছে পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মুখের ছবি এঁকে তিনি লিখেছিলেন ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশার সাথেও এই শিল্পীর নাম জড়িত। এর ঠিকপাশেই শায়িত আছেন শিল্পগুরু সফীউদ্দিন আহমেদ। যিনি দেশের ছাপচিত্রকলার শিল্পগুরু ছিলেন। ছাপাই ছবির প্রসার ও এ শিল্পকে এক ভিন্ন নান্দনিকতা দানের ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
দেশবরেণ্য এইসব শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মানুষদের শেষঠিকানা এখানে রয়েছে। অথচ সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ শুধু নজরুল সমাধিসৌধ কেন্দ্রিক। যেমনটা শোনা গিয়েছিল কলেজ ছুটির পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা নটরডেম কলেজের দুই শিক্ষার্থী উদয় ও আসিফের বক্তব্যে। নজরুলের সমাধির কথা জানা থাকলেও, এখানে যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান সহ আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির কবর রয়েছে সেটি তাদের জানা ছিলোনা। উদয় মনঃক্ষুণ্ন হয়ে জানালেন যথাযথ উদ্যোগের অভাবে অনেক দর্শনার্থীর কাছে গণকবর এবং অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের কবরের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না।
এর কারণ জানতে নজরুলের সমাধির সংরক্ষক ফেকুলাল ঘোষের সাথে কার্জন হলের বোটানি ডিপার্টমেন্টের আরবিটরি কালচার অফিসে কথা হয়। নজরুলের সমাধির পাশে অন্যান্য গণকবরের অনাদরে পড়ে থাকার বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন “দেখুন বটগাছের ছায়ায় অনেক গাছ ঢাকা পড়ে যায়। নজরুল আমাদের জাতীয় জীবনে সেই বটগাছ। তাই তাঁর সমাধির পাশে থাকা গণকবর হয়তো অনেকের চোখ এড়িয়ে যায়।” কিন্তু কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে খুব সোচ্চার বলেই জানালেন তিনি। গণকবরের পাশাপাশি অন্যান্য কবরের পবিত্রতা কেউ যেন নষ্ট না করতে পারে সেটি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তবে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সবসময় তা হয়ে ওঠে না এবং লোকবল নিয়োগদানের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তবে এই গণ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের কবরগুলো শুধু আমাদের অজানা নয়, এখানে নজরুল সমাধিসৌধ দেখতে আসা ষাটোর্ধ্ব লিটন কৃষ্ণকর ও তার পরিবার, প্রেমিকাকে নিয়ে নিরিবিলি সময় কাটাতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীটি এবং কলেজ পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীর মনে সবশেষে একটি প্রশ্ন তুলেছে, দেশমাতৃকার জন্য সংগ্রাম ও গৌরবান্বিত করে যাওয়া ‘ওরা কেন অজানা থাকবে?’
- ঢাবি’র সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত
- ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে খোলা থাকছে ঢাবি`র অফিসসমূহ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
- চত্বরের সমারোহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নামের পেছনের গল্প
- আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট: ভিনদেশীয় ভাষা শেখার পথপ্রদর্শক
- রোকেয়া হল সংসদের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি
- ঢাবির শামসুন্নাহার হলে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার
- আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট: ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
- কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি জ্ঞান চর্চা নাকি চাকরির পড়াশুনার আতুরঘর
- এমসিজে-৪০৯ শিক্ষার্থীদের অনলাইন মিডিয়া হাউজ পরিদর্শন