দেয়াল যখন কথা বলে
জাকির হোসেন রাজু
ডিইউএমসিজেনিউজ.কম
প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ০৪:২২ এএম, ৫ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার

দেয়াল যখন কথা বলে
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই মত প্রকাশ ও প্রতিবাদের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় ‘দেয়ালচিত্র’। সম্প্রতি বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের দেয়ালগুলো আবার হয়ে উঠেছে সরব। আবু বকর, এহসান রফিক, হাফিজুর মোল্লা ও আবরার ফাহাদের মুখ বলে দিচ্ছে ছাত্ররাজনীতির নামে চলা নির্যাতন-নিপীড়নের নৃশংস সব ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আঁকা এসব দেয়ালচিত্র ‘গ্রাফিতি’ নামে পরিচিত। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার শিল্পিত মাধ্যম হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মঞ্চ ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’-এর উদ্যোগে ক্যাম্পাসের কলাভবনের দেয়ালে আঁকা হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে নির্যাতনের শিকার এহসান রফিকের রক্তাক্ত ও বিধ্বস্ত চেহারা। সহপাঠীর কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন তিনি। দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে তাঁর বাঁ চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়, কপাল ও নাক ফেটে যায়। পরে নিরপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছাড়েন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তিনি।
কলাভবনের দেয়ালের যে পাশে এহসানের গ্রাফিতি আঁকা, তার পাশের চিত্রটি আবু বকরের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হওয়ার এক দিন পর তিনি মারা যান। দিনমজুর বাবার ছেলে আবু বকর তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৭৫ পেয়েছিলেন। চতুর্থ সেমিস্টারের ফল বের হওয়ার আগে তিনি খুন হন। ওই বিভাগে তাঁর আগে এমন ভালো ফল কেউ করেননি।
একই মঞ্চের উদ্যোগে সম্প্রতি উপাচার্যের বাসভবনসহ ডাকসু ভবনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল, ক্যাফেটেরিয়ার দেয়াল ও প্রবেশমুখে আঁকা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লার গ্রাফিতি। সাড়ে তিন বছর আগে মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুরের করুণ মৃত্যু দেখেছিল বাংলাদেশ।
অটোরিকশাচালকের ছেলে হাফিজুরের বাসা ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য ছিল না। তাই ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইদের’ মাধ্যমে উঠেছিলেন এসএম হলের বারান্দায়। গভীর রাতেও তাঁকে যেতে হতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে এক শীতের রাতে তাঁকে সারা রাত হলের বাইরে খোলা জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। গ্রাফিতিতে হাফিজুরকে হাজির করা হয় গেস্টরুম অত্যাচারের প্রতীক হিসেবে।
কলাভবন ও ডাকসু ভবনের দেয়ালসহ বুয়েটের প্রধান প্রবেশপথ ও হলগুলোর দেয়াল ভরে উঠেছে আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আঁকা গ্রাফিতিতে। এই গ্রাফিতিগুলো আঁকা হয়েছে স্টেনসিল (লেখা বা আঁকার জন্য ছিদ্রময় পাত) ব্যবহার করে। যার প্রতিটির পাশে লেখা ‘জাস্টিস ফর আবরার’।
বছরখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলের দেয়ালে আঁকা দুটি গ্রাফিতি ব্যক্তিপরিসর ছাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ছড়িয়েছিল। এর একটি মূর্ত করে তুলেছিল সিংহাসন ফুটো করে বেরিয়ে আসা একটি পেনসিলের চোখা প্রান্ত। পাশে লেখা ছিল, ‘উফ!’ আরেকটি চিত্র বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর রাখা ছিল রিমান্ড কক্ষের বাতি। পাশে মোটা হরফে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশ রিমান্ডে’।
কাছাকাছি সময়ে ওই দেয়াল দুটিতেই আঁকা হয়েছিল ‘সহমত ভাই’ ও ‘হেলমেট ভাই’ নামের দুটি আলাদা গ্রাফিতি। দর্শনার্থীরা ‘সহমত ভাই’কে সংযুক্ত করেছিলেন সমাজে বিদ্যমান তোষামোদির চর্চার সঙ্গে। আর ‘হেলমেট ভাই’ সম্পর্কে তাঁদের মূল্যায়ন ছিল, এরা তোষামোদির চর্চাকারীদের পক্ষে কাজ করা পীড়নকারীদের দল।
- ঢাবি’র সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত
- ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে খোলা থাকছে ঢাবি`র অফিসসমূহ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
- চত্বরের সমারোহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নামের পেছনের গল্প
- আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট: ভিনদেশীয় ভাষা শেখার পথপ্রদর্শক
- রোকেয়া হল সংসদের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি
- ঢাবির শামসুন্নাহার হলে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার
- আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট: ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
- কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি জ্ঞান চর্চা নাকি চাকরির পড়াশুনার আতুরঘর
- এমসিজে-৪০৯ শিক্ষার্থীদের অনলাইন মিডিয়া হাউজ পরিদর্শন